খোন্দকার শাহিদুল হক
বর্ণপরিচয়-১
বাংলা বর্ণমালার প্রতিটি বর্ণের নিজস্ব অর্থ আছে, যা গণিতের সূত্রের মতো। কোন শব্দ কী অর্থ ধারণ করে আছে তা বর্ণগুলি দেখলেই জানা সম্ভব। আজ আমরা বর্ণগুলির অর্থ জানার চেষ্টা করবো। বর্ণের নিজস্ব অর্থ না জেনে বানান নিয়ে বিতর্ক করা আমার কাছে অর্থহীন বলে মনে হয়। আবার শব্দের অর্থ নির্ণয়েরও বেশ কিছু সূত্র আছে- যা নিয়ে কোনো এক সময় আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে।
স্বরবর্ণের অর্থ-
অ- তে অস্তিত্বন, আ- ত অস্তিত্ব, ই-তে সক্রিয়ণ, ঈ-তে সক্রিয়, উ-উত্তীর্ণন (নবরূপে), ঊ-তে উত্তীর্ণ (নবরূপে) ঋ-তে আবর্তন, এ-তে দিশাগ্রস্তন, ঐ- দিশাগ্রস্ত, ও-অস্তিত্বাদিকরণ, ঔ-অস্তিত্বাদিকর
ব্যঞ্জনবর্ণগুলির অর্থ-
ক-করণ, খ-করণস্থিতি, গ-গমন, ঘ-গমনস্থিতি, ঙ-কারীরহস্য, চ-চয়ন, ছ-চয়নস্থিতি, জ-জনন, ঝ-জননস্থিতি, ঞ-চায়ীরহস্য, ট-টঙ্কারণ, ঠ-টঙ্কারণস্থিতি, ড-ডয়ন, ঢ-ডয়নস্থিতি, ণ-টঙ্কারীরহস্য, ত-তারণ, থ-তারণস্থিতি, দ-দান, ধ-দানস্থিতি, ন-নাকরণ-অনকরণ, প-পালন, ফ-পালনস্থিতি, ব-বহন, ভ-বহনস্থিতি, ম-সীমায়ন।
য- যাওয়ন, র-রহন-ভক্ষণ-রক্ষণ, ল-লালন-লোপন, শ-শক্তিযোজন, ষ-দিশাগ্রস্ত শক্তিযোজন, স-একরৈখিক শক্তিযোজন, হ-হওন, ড়-ড-এর রহস্যরূপ, ঢ়-ঢ-এর রহস্যরূপ, য়-যাওনের রহস্যরূপ, ৎ-উল্লম্ফন,ং বিন্দু, ঃ- বিসর্জন, ঁ-বিন্দু।
প্রতি বর্গের প্রথম বর্ণটি যে ক্রিয়াকে প্রকাশ করে, দ্বিতীয় বর্ণটি তার স্থিতিরূপকে প্রকাশ করে; একই ভাবে তৃতীয় বর্ণটি যে ক্রিয়াকে প্রকাশ করে, চতুর্থ বর্ণটি তার স্থিতিরূপকে প্রকাশ করে।
এ ছাড়া প্রতিবর্গের পঞ্চম বর্ণে অংরূপিণীর ক্রিয়া থাকে।
বর্ণপরিচয়-২
অ-তে অস্তিত্বন, আ-তে অস্তিত্ব
বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয় পর্বে আমরা ‘অ’ এবং ‘আ’ নিয়ে আলোচনা করবো। পরিচয় পর্ব-১ এ দেখেছি অ-তে অস্তিত্বন এবং আ-তে অস্তিত্ব। এবার দেখা যাক, ‘অস্তিত্বন’ কী। অভিধান অনুযায়ী অস্তি অর্থ সত্তা; অস্তিত্ব; স্থিতি বিদ্যমানতা। অর্থাৎ যা কিছু আছে বলে স্বীকার করা হয় তার বিদ্যমানতা বা অস্তিত্ব বা অবস্থান বা স্থিতির প্রকাশ। কিন্তু অস্তিত্বন বলতে হলে বলতে হয়, যার অস্তিত্ব কেবল চেতনার জগতে, ভাবলোকে, মনোলোকে বিদ্যমান বা চলমান আছে কিন্তু বাস্তবে আকৃতিগত অবস্থান বা বিদ্যমানতা বা স্থিতি বা অবস্থান নেই। যাকে স্বীকার করে নেওয়া যায় কিন্তু দেখানো যায় না। যার ক্রিয়া আছে কিন্তু দৃশ্যমান নয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ‘অ’ বর্ণটির ক্রিয়া বা অবস্থান কেবল আমাদের চেতনালোকে চলমান। তাকে আমরা দেখি নি কিংবা ছুঁইতেও পারি না কিন্তু বুঝতে পারি। যা কিছু কল্পলোক থেকে আমাদের চেতনায় অবতীর্ণ হয়েছে কিন্তু তাকে দেখার জন্য বা ক্রিয়ার জন্য রূপ দেওয়ার আকুতি আছে তা হলো অ। আর যদি অ একটা রূপ পেয়ে যায় তবে আর সে অ থাকে না, আ হয়ে যায়। অ অন হয়ে আ-তে আশ্রয়প্রাপ্ত হয়ে অস্তিত্ববান হয় কিংবা আকৃতিপ্রাপ্ত হয়- যা দৃশ্যমান কিংবা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য।
অথচ সকল অস্তিত্বের বিকাশ এই অ থেকে। অস্তিত্বকে অ ধারণ করে অন হলেই তাকে অস্তিত্বন বলে।
এখানে বোঝার জন্য ইংরেজি ঘড় এবং ঙহ এই দুটো শব্দ দেখবো। একই বর্ণ ঘুরিয়ে দিলেই দুরকম আচরণ করে। ঙহ করলেই চলতে থাকে। আবার ঘড় বললেই অস্বীকার করা হয়। স্বরবর্ণের অ বর্ণটিও কখনো ঙহ আবার কখনো ঘড় হয়। অ-এর অনকরণ বা না-করণ হলে অন হয়। তখন অস্তিত্বন তার বিকাশ বা সমাপ্তির দিকে তথা আ-য়ের দিকে এসে আ-এ আশ্রয় নিয়ে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হয়। জীবন, চলন, বলন প্রভৃতি শব্দে অন শব্দটি প্রত্যয়রূপে ব্যবহৃত হয়ে সক্রিয় থাকে।
তাহলে আমরা অ সম্পর্কে বলতে পারি- অ-হৃদগত হয়ে মনোলোকে স্থিত বা ভূমিষ্ঠ হয় যে; অথবা যা হতে কোনো কিছুর সূচনা হয়ে থাকে। অস্তিত্বমাত্র, সত্তামাত্র, নাকৃত, আধেয়ধারী আধার কিংবা কথা মাত্রা।
অ থেকে অংশ হয়ে গেলে তার অর্থ দাঁড়ায় যে খÐ পৃথকভাবে সক্রিয় থাকতে পারে বা অখÐের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তাকে অংশ বলে। অংশ হলো অখন্ডের শক্তির রহস্যরূপ। উল্লেখ্য, বর্ণভিত্তিক নিয়মে শ বর্ণের সার্বিক শক্তিবিচ্ছুরণ বুঝতে হবে। এই অংশই আবার নবরূপে উত্তীর্ণ হয়ে অংশু বা কিরণ হয়ে যায়। সে অনেক কথা। আজ এ পর্যন্তই থাক।
এবার আসা যাক আ-য়ের কাছে। অ যেখানে এসে আকৃতি বা অস্তিত্ব লাভ করে তাকেই আ বলে।
সূত্রানুসারে অ-এর (আধেয়র বা নাকরণ অনকরণের) আধার বা আশ্রয় যে; অথবা, আধেয় বা অস্তিত্বকে ক্রোড় দেয় বা আধারিত কওে যে; কিংবা, আধেয়কে নিষ্ক্রিয় বা না করে দিয়ে রাখে যে; অথবা, আধেয়কে চলমান বা অন করে রাখে যে। সুতরাং আ হলো আধেয়ধারী, অস্তিত্ব, আধার, আধারিত করা, না-করা, নাকৃত, অন করা, অনকৃত আশ্রিত ।
অস্তিত্বেও যে দুটি ভাগ করা হয়- আধার ও আধেয়, তার মধ্যে অ প্রধানত আধেয়কেই বোঝায় এবং আ প্রধানত আধারকেই বোঝায়।
এবার আরও সহজ করে বলি, অ-এর রূপ হলো কল্পিত। আর আ-এর রূপ হলো বাস্তব। অ-এর আধার হলো আ। যেমন গাধ মানে অল্প। এবার গাধকে( গাধ+া) আকার দেন দেখবেন গাধা হয়ে গেছে। গাধা হলো অল্পের আধার যে।
চলবে. . . .